আজ: রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫ইং, ১৬ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, সোমবার |

kidarkar

সুদ আয় ও বিনিয়োগ আয়ে থাকা শীর্ষ ১০ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংক গত বছরের প্রথম ৯ মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে। তারা সম্মিলিতভাবে মোট ২১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা প্রকৃত সুদ আয় করেছে, যা তাদের বিনিয়োগ আয়ের অর্ধেকেরও বেশি। তবে আরও একটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ থেকে আয় হয়েছে ১৮ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা বেশিরভাগ ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আয়কে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ, সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে, তাদের মূল ব্যবসার আয়ের চেয়ে বিনিয়োগ আয় বেড়ে গেছে।

বিশেষভাবে বললে, কয়েক বছর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতের স্থবিরতা, সরকারের ঋণ কেলেঙ্কারি এবং ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো তাদের মূল ব্যবসায় সুদ আয় থেকে কম আয় করছে। আবার বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণ বিতরণেও ব্যাংকগুলো কিছুটা সাবধানী পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, একদিকে যেখানে ঋণ বিতরণ কমে গেছে, সেখানে অন্যদিকে সরকারের ট্রেজারি বিল, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের মাধ্যমে বেশ ভালো মুনাফা অর্জন করেছে এসব ব্যাংক।

১. ব্যাংকগুলোর মূল ব্যবসা সুদ আয়:

ব্যাংকগুলোর মূল ব্যবসা হলো মানুষের কাছ থেকে কম সুদে আমানত সংগ্রহ এবং তা বেশি সুদে ঋণ দেওয়া। তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতা, ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে সুদ আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো সরকারি সিকিউরিটিজ, ট্রেজারি বন্ড, এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে আয়ের পরিমাণ বাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে উচ্চ সুদের হারে বিনিয়োগ থেকে কিছু ব্যাংক অত্যধিক মুনাফা অর্জন করেছে।

২. ব্র্যাক ব্যাংক:

ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে ১ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ আয় করেছে। তবে, ব্যাংকটির প্রকৃত সুদ আয় ছিল ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা বিনিয়োগ আয়ের চেয়ে ৫৬% কম। ব্র্যাক ব্যাংক, তারল্য ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে এই অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করেছে এবং এটি তার শেয়ারধারীদের জন্যও লাভজনক হয়েছে।

৩. পূবালী ব্যাংক:

একইভাবে, পূবালী ব্যাংকেও বিনিয়োগ আয়ের পরিমাণ প্রকৃত সুদ আয়ের চেয়ে বেশি ছিল। ব্যাংকটি গত ৯ মাসে ১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকে আয় করেছে, যেখানে প্রকৃত সুদ আয় ছিল ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এটি জানাচ্ছে যে, ব্যাংকটির সুদ আয় থেকে বেড়ে গেছে বিনিয়োগ আয়।সুদ ও বিনিয়োগ আয়ের সম্পর্ক:

ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হল সুদ আয়, যেটি ব্যাংক ঋণ দিয়ে এবং আমানত সংগ্রহ করে অর্জন করে থাকে। তবে, বর্তমান সময়ের পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো তারল্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে আরও বেশি মুনাফা অর্জন করছে। এতে কিছু ব্যাংকের সুদ আয়কে ছুঁয়ে ফেলেছে বিনিয়োগ আয়ের পরিমাণ।

বিনিয়োগ আয়ে শীর্ষে থাকা ব্যাংকগুলো:

১. ব্র্যাক ব্যাংক – ১ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা

২. পূবালী ব্যাংক – ১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা

৩. রূপালী ব্যাংক – ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা

৪. সিটি ব্যাংক – ১ হাজার ০১২ কোটি টাকা

৫. ব্যাংক এশিয়া –৯৮০ কোটি টাকা

৬. ইস্টার্ণ ব্যাংক – ৭৮৯ কোটি টাকা

৭.সাউথইস্ট ব্যাংক – ৬৯৭ কোটি টাকা

৮. প্রাইম ব্যাংক – ৬৯৩ কোটি টাকা

৯. ডাচ–বাংলা ব্যাংক – ৬৬২ কোটি টাকা

১০. মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক – ৬৫৫ কোটি টাকা

এছাড়া, রূপালী ব্যাংক যেমন জানিয়েছে, তার প্রকৃত সুদ আয় ছিল ঋণাত্মক (আমানতকারীদের কাছ থেকে বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে)। তাই ব্যাংকটি ট্রেজারি বিল–বন্ডে বিনিয়োগ করে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করেছে।

সুদ আয়ে শীর্ষ ব্যাংকগুলো:

১. ইসলামী ব্যাংক: ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা

২. ডাচ্–বাংলা ব্যাংক: ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা

৩. ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি): ১ হাজার কোটি টাকার বেশি

৪. ব্র্যাক ব্যাংক: ১ হাজার কোটি টাকার বেশি

৫. পূবালী ব্যাংক: ১ হাজার কোটি টাকার বেশি

৬. সিটি ব্যাংক: ১ হাজার কোটি টাকার বেশি

এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এসব ব্যাংকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাংক যেগুলো প্রকৃত সুদ আয় থেকে হাজার কোটি টাকা উপার্জন করেছে।

ব্যাংকাররা বলেন, বর্তমানে যেভাবে ট্রেজারি বিল–বন্ডে বিনিয়োগ থেকে আয় করা হচ্ছে, তা সবসময় থাকবে না। অর্থনীতি যদি গতি পায় এবং ঋণের চাহিদা বাড়ে, তবে ব্যাংকগুলোর সুদ আয় আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে অনেক ব্যাংকের মুনাফা কমে যেতে পারে।

এটি স্পষ্ট যে, বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের আয়ের বেশিরভাগ অংশ সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থেকে আসছে। তবে, ব্যাংকগুলোর মূল ব্যবসা, সুদ আয়, দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৩ উত্তর “সুদ আয় ও বিনিয়োগ আয়ে থাকা শীর্ষ ১০ ব্যাংক”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.