আজ: সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ইং, ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার |

kidarkar

বিমা শেয়ারের উল্লম্ফন, তলিয়ে গেল অন্য খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে হঠাৎ করেই শক্ত অবস্থানে উঠে এসেছে বিমা খাত। দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমুখী ধারায় থাকা বাজারে রবিবার (১৬ মার্চ) বিমা খাতের শেয়ারগুলো দাপট দেখালেও অন্যান্য খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেছে। ফলে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়লেও মূল্যসূচকের পতন ঠেকানো যায়নি, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শেয়ারবাজার চাঙ্গাভাব নিয়ে শুরু হলেও তা খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। দিনের প্রথম ভাগে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায়, যার ফলে সূচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখায়। কিন্তু মাত্র আধাঘণ্টার ব্যবধানে বাজারের চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। একের পর এক খাতের শেয়ারদর কমতে শুরু করে, যার মধ্যে ছিল ব্যাংক, বস্ত্র, ওষুধ, সিমেন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিনিয়োগকারীদের বিক্রিচাপ বাড়তে থাকায় বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বিমা খাত শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৫৮টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ৪৯টির শেয়ারদর বেড়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে নজিরবিহীন। অন্যদিকে, ৮টি বিমা কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে এবং ১টির দর অপরিবর্তিত ছিল। বিমা খাতের শেয়ারদর বাড়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ালেও বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি খুব বেশি ইতিবাচক হয়নি।

সব গ্রুপের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমার ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট কমে ৫,২২১ পয়েন্টে নেমে এসেছে। শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে ১,১৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে ১,৮৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচকের এই পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করেছে, যদিও লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।

ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেশি। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, যার ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন, যার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার, এবং তৃতীয় স্থানে ছিল বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, যার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ২১ লাখ টাকার।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বাজার তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক ছিল। সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৭ পয়েন্ট বেড়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৭টির শেয়ারদর বেড়েছে, ৬৬টির কমেছে এবং ২৮টির দর অপরিবর্তিত ছিল। তবে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিমা খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি সাম্প্রতিক বিনিয়োগ প্রবণতার প্রতিফলন হলেও বাজারের সার্বিক স্থিতিশীলতা এখনও নিশ্চিত হয়নি। অনেক বিনিয়োগকারী শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী মুনাফার আশায় বিমা খাতে প্রবেশ করছেন, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংশোধনের ইঙ্গিত দিতে পারে। অন্যদিকে, সূচকের পতন এবং অন্যান্য খাতের দুর্বলতা বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগকারীদের আরও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি বাজারে তারল্য প্রবাহ আরও বাড়ে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসে, তাহলে সূচক আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারে। তবে যদি অন্যান্য খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না বাড়ে, তাহলে বিমা খাতের উত্থানও বাজারকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে না।

বিমা খাতের দাপটে বাজারের লেনদেন বেড়েছে, তবে সূচকের পতন বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেয়ারবাজার কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আগামী কয়েক দিন বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

 

২ উত্তর “বিমা শেয়ারের উল্লম্ফন, তলিয়ে গেল অন্য খাত”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.