১৫ দিনে এসেছে ১৬৫ কোটি ডলার
রেকর্ড ভাঙছে রেমিট্যান্স! মার্চে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে প্রবাসী আয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং সরকার পরিবর্তনের পরপরই বেড়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ডিসেম্বরে দেশ রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পেয়েছিল, প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। এবং ফেব্রুয়ারি মাসে তা পৌঁছেছিল ২৫৩ কোটি ডলারে। তবে এখনই সঠিক সময়েই নতুন রেকর্ডের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। চলতি মার্চ মাসে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তা অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (১২২ টাকা প্রতি ডলার হিসাবে) এটি প্রায় ২০ হাজার ২০৪ কোটি টাকার সমান। প্রতিদিন ১১ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে, যা টাকার হিসেবে প্রায় ১৩৪৭ কোটি টাকার সমান। যদি এই ধারা বজায় থাকে, তবে মার্চ মাসের শেষে রেমিট্যান্স পৌঁছাতে পারে ৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক তৈরি করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের অর্থপাচার কিছুটা কমেছে, এবং হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এর ফলে, প্রবাসীরা এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়া, খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে, যা প্রবাসীদের জন্য আরও সুবিধাজনক হয়েছে। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মার্চের প্রথম ১৫ দিনে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণও বিস্তারিতভাবে প্রকাশ পেয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৭ কোটি ১১ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৩ কোটি ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে এসেছে ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স, এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
এদিকে, কিছু ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৫৫ কোটি ডলার। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ইতিবাচক সিগন্যাল।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল। আগের রেকর্ড ছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে, যখন ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ডিসেম্বরে এই রেকর্ড ভেঙে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আসা ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি।
এই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছে। গত বছর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বেড়েছে, এবং চলতি বছরের শুরু থেকেই তা আরও শক্তিশালী হয়েছে। দেশে প্রবাসী আয়ের এই প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে, এবং এটি জাতীয় উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এবারে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিহাসের নতুন শিখরে পৌঁছানোর পথে রয়েছে। যদি মার্চ মাসের প্রবাহ একইভাবে অব্যাহত থাকে, তবে দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলার পার করতে পারে, যা হবে একটি বড় অর্জন এবং দেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তার নিদর্শন।