১৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৮৭ কোটি টাকা জরিমানা করলো বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ৯টি প্রতিষ্ঠান ও ৪ ব্যক্তিকে মোট ১৮৭ কোটি ২২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ৪ মার্চ বিএসইসির কমিশন সভায় এই জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি শিগগিরই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে চিঠি পাঠাবে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে, ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সি পার্লের শেয়ারের দাম ৪০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২২ সালের ৩ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা, যা ১০ আগস্ট ২০২৩ সালে ২১৭ টাকা ৪০ পয়সায় পৌঁছায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে কারসাজি বলে চিহ্নিত করেন।
তদন্তে দেখা গেছে, একদল বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে ১৯টি বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৭৯ লাখ ৪৩ হাজার শেয়ার কেনা হয় এবং ৭৫ লাখ ৫ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো। এই কৌশল সফল হওয়ায় শেয়ারের মূল্য ২০২২ সালের ৩১ জুলাই থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা ৪৪ টাকা থেকে বেড়ে ১৩৭ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠে।
তদন্ত শেষে বিএসইসি চার ব্যক্তিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে। এর মধ্যে মো. কালাম হোসেনকে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, আবু সাদাত মো. ফয়সালকে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, জামরুল হাসান মো. ইকবাল গণি এবং মো. আবু নাঈমকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া ৯টি প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউডিসি কনস্ট্রাকশনকে ৬৮ কোটি ১ লাখ টাকা, ভেনাস বিল্ডার্সকে ৬৯ কোটি ১ লাখ টাকা এবং শতরং অ্যাগ্রো ফিশারিজকে ২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া রিদয় পোল্ট্রি ফার্ম, হাসান নার্সারি, আমানল অ্যাগ্রো ফিশারিজ, সাব্বির স্টোর, সরকার অ্যাগ্রো ফার্ম ও মুক্তা ফিশারিজকেও বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগেও ২০২২ সালে ডিএসইর তদন্তে ১৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সি পার্লের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তখন বিএসইসি কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে শুধুমাত্র সতর্কবার্তা পাঠায়। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সঠিক সময়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই কারসাজি এত বড় পরিসরে গড়াত না। আগের তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেবল সতর্কবার্তা জারি করায় কারসাজিকারীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং শেয়ারদর কৃত্রিমভাবে বাড়াতে থাকে।
বিএসইসির এই জরিমানার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই বিশাল অঙ্কের জরিমানার অর্থ আদায় করা হবে কি না এবং অভিযুক্তরা নতুন কোনো কৌশলে পার পেয়ে যাবে কি না। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিএসইসি যদি এই ধরনের তদন্ত আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করে, তাহলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি নিরাপদ থাকবেন। এবার বিএসইসি কতটা কার্যকরভাবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে, সেটির দিকেই নজর থাকছে সবার।