আজ: বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫ইং, ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ মার্চ ২০২৫, রবিবার |

kidarkar

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বাধা দূর করলেই আসবে ভালো কোম্পানি: রূপালী হক চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানির অভাব রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ দেশে বহু সম্ভাবনাময় দেশি-বিদেশি কোম্পানি রয়েছে, যারা এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে হলে বিনিয়োগ ও তালিকাভুক্তির পথকে আরও আকর্ষণীয় করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)-এর প্রেসিডেন্ট ও বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী হক চৌধুরী।

রবিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বর্তমানে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো অনেক সুবিধা ভোগ করছে, অথচ তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর নানা শর্ত ও করের বোঝা বেশি। আমাদের করপোরেট কর ব্যবধান ছিল ১৫ শতাংশ, যা অতালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য অনেক সুবিধাজনক। এখন তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত উভয়ের ক্ষেত্রেই কোম্পানি আইন পর্যালোচনা করা দরকার। শুধু কর নয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, যাতে তারা বাজারে আসতে আগ্রহী হয়।”

তিনি আরও বলেন, “কেন কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করবে, যদি পুঁজিবাজার থেকে তুলনামূলক সহজে মূলধন সংগ্রহের সুবিধা না পায়? তালিকাভুক্ত হলে যদি পর্যাপ্ত সুবিধা না পাওয়া যায়, তাহলে তারা কেনই বা আইপিওতে আসবে? ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া সহজ হলেও সুদের হার বেশি। তাই যদি পুঁজিবাজারের সুবিধা বাড়ানো যায়, তবে দেশি-বিদেশি ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে।”

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়িক পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রূপালী হক চৌধুরী বলেন, বন্দরের চার্জসহ বিভিন্ন সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। “এই মুহূর্তে শুল্ক বাড়ানো হলে ব্যবসা-বাণিজ্য মূল্যস্ফীতির চাপ নিতে পারবে না। আমরা বিএপিএলসি থেকে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে রঙের ওপর, অথচ এটি এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। রং শুধু সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়, এটি পণ্যকে নিরাপদ রাখে। তাই শুল্ক নীতিগুলো সমঝোতামূলক হতে হবে।”

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবকাঠামো ও নীতিগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আমাদের লজিস্টিক খাতের দক্ষতা কম। যানজট ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা বাড়তি খরচের মুখে পড়ছেন। কাঁচপুর ব্রিজসহ বিভিন্ন জায়গায় যানজটের কারণে লিড টাইম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তাই সরবরাহ চেইনকে বিশ্বমানের করতে হবে এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তা বাড়ানো হয়নি। এ ধরনের অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করতে হবে, নাহলে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকতে পারব না।”

পুঁজিবাজারের সুশাসন নিয়ে তিনি বলেন, “দুর্নীতি তখনই সম্ভব হয়, যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছায়া থাকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর হতে হবে, যারা অনিয়ম করবে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার রেগুলেটরি বডি এমন হতে হবে যে, দোষ করলে শাস্তি নিশ্চিত হবে। মানুষ কাজ করে দুই কারণে—একটি হলো প্রণোদনা, আরেকটি হলো শাস্তি। যদি কোনো শাস্তিই না থাকে, তবে দুর্নীতি আরও বাড়বে। খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশে পৌঁছেছে, অথচ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা হতে পারে না। আমাদের উদাহরণ তৈরি করতে হবে—যারা অনিয়ম করবে, তারা শাস্তি পাবে।”

দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রূপালী হক চৌধুরী বলেন, “আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি। আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। একজন মানুষের কত টাকা লাগবে? আমরা কয়টা বাড়িতে থাকব, কয়টা বিছানায় ঘুমাব? তাই দেশের জন্য কিছু করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, কিন্তু তেমন কোনো বেতন দিইনি। তাহলে এখন আমাদের দায়িত্ব কি? দেশকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়া। আমাদের সেই চেতনা আসতে হবে—আমি দেশের জন্য কিছু করব।”

তিনি মনে করেন, “আমরা বেশিরভাগ মানুষই ভালো থাকতে চাই, কিন্তু অল্প কিছু ব্যক্তির কারণে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সৎ মানুষের সংখ্যা বেশি, কিন্তু দুর্নীতিবাজরা আমাদের চিহ্নিত করে দিচ্ছে। এখন সময় এসেছে জেগে ওঠার। এটা আমার, আপনার, আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা সবাই মিলে দেশটাকে পরিবর্তন করব। আমি আশাবাদী।”

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.