তিন কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে ধস, আস্থা সংকটে বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে টানা তিন কার্যদিবস ধরে ব্যাপক দরপতন চলছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার, আগের দুই দিনের তুলনায় আরও গভীর হয়েছে এই পতন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) উভয় বাজারেই বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। বিশেষ করে, আজ ডিএসইতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে, যা বাজারের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮.৩৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৮৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। যদিও অন্য দুটি সূচকে সামান্য উত্থান দেখা গেছে, তবুও বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি ছিল হতাশাজনক। ডিএসইএস সূচক ০.৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮.৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, তবে এটি বাজারের সাধারণ প্রবণতায় কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ডিএসইতে আজ ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৮৩টির, বিপরীতে ২৫৩টির দর কমেছে, এবং ৬২টি কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ায় বাজারে লেনদেনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আজ ডিএসইতে ৪২১ কোটি ২৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা কম। গত কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। আজ সিএসইতে ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে ৫৩টির দর বেড়েছে, ১১৯টির দর কমেছে এবং ২১টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৮.১৫ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫২১ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আগের কার্যদিবসেও সূচক ৭.৩৮ পয়েন্ট কমেছিল।
তবে, লেনদেনে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। আজ সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার, যা আগের দিনের ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার তুলনায় বেশি।
টানা তিন কার্যদিবসের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, তারল্য সংকট এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের অভাবের কারণে বাজারে এমন দরপতন চলছে।
অনেকে বাজার থেকে শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে লেনদেন কমছে এবং দরপতন আরও তীব্র হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যদি নীতিনির্ধারকরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেন, তাহলে এই পতন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার স্থিতিশীল করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং তারল্য সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বস্তিদায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। অন্যথায়, শেয়ারবাজার আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে, যা অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।