আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজিতে ১৫ কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর অভিযোগে বিনিয়োগকারী গাজী রাভী হাফিজকে ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মে পর্যন্ত সময়ে তিনি চারটি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ব্যবহার করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেন। তার কারসাজির ফলে শেয়ারের দাম ৭৪.৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩৬.১০ টাকায় পৌঁছায়, যা ৮২.৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি।
সূত্রে জানা গেছে, গাজী রাভী হাফিজ কৌশলগতভাবে সিরিজ ট্রেডিং করে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করেন এবং বাজারে মিথ্যা প্রতিযোগিতার আবহ তৈরি করেন। তার চারটি বিও অ্যাকাউন্ট থেকে ধারাবাহিক লেনদেনের মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানোর চক্রান্ত করা হয়। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ১৩ ও ১৪ মার্চ মাত্র দুই দিনে তিনি ১৬৫টি হাওলার মাধ্যমে ৭২,১৯৭টি শেয়ার লেনদেন করেন, যা একটি অস্বাভাবিক লেনদেন। এই কৌশলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়, যা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৭(ই)(৩) ও ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘনের দায়ে তাকে দুটি ধারায় মোট ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেকশন ১৭(ই)(৩) লঙ্ঘনের দায়ে ৭.৫০ কোটি টাকা এবং সেকশন ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘনের দায়ে আরও ৭.৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গাজী রাভী হাফিজ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তিনি প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে পোর্টফোলিও ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও বর্তমানে তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তবে ব্যক্তিগতভাবে শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
এ বিষয়ে গাজী রাভী হাফিজ বলেন, “এখনো পর্যন্ত আমি বিএসইসির পক্ষ থেকে কোনো চিঠি পাইনি, তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। শুনানি তো বিভিন্ন কারণেই হয়, তবে আমি বিষয়টি বিস্তারিত জেনে পরে বলতে পারব।”
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিএসইসির এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। অতীতে অনেক কারসাজির ঘটনা প্রকাশ পেলেও কঠোর শাস্তির অভাবে অসাধু চক্র সক্রিয় ছিল। তবে নতুন কমিশনের নেতৃত্বে বিএসইসি এখন শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর হচ্ছে। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে অসাধু বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জরিমানার আদায় করলেই হবে না আদায় নিশ্চিত করতে হবে