আজ: বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ইং, ১৩ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার |

kidarkar

বিএসইসি টাস্কফোর্সের সুপারিশ

হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিতে চাইলে আসতে হবে পুঁজিবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, এবং বাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত টাস্কফোর্স গত ২৪ মার্চ, সোমবার, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ জমা দিয়েছে। টাস্কফোর্সের অন্যতম সুপারিশ হলো, ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ নেয়া কোম্পানির জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করা। এই সুপারিশের উদ্দেশ্য হলো, বড় ঋণগ্রহীতাদের ওপর তত্ত্বাবধান বাড়ানো এবং শেয়ারবাজারে কোম্পানির কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করতে হবে।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে যাতে ব্যাংকগুলো এই নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। অর্থাৎ, যারা এক হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ নেবে, তাদের জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হবে। এটি মূলত ব্যাংক ঋণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শেয়ারবাজারের আস্থার সৃষ্টি করতে সহায়ক হবে।

টাস্কফোর্সের আরেকটি সুপারিশ হলো, শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আসার জন্য আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) অনুমোদনের প্রাথমিক ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে কোম্পানি এবং বাজারের নিরীক্ষণ আরও উন্নত হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোনো কোম্পানির আইপিও প্রস্তাব বাতিল করে, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সেই কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিতে পারবে না। এই ব্যবস্থা আইপিও প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর এবং স্বচ্ছ করতে সাহায্য করবে।

এ সময় টাস্কফোর্স আরও উল্লেখ করেছে যে, শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আসার ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিতে আসবে তা নির্ধারণ করতে একটি কঠোর মানদণ্ড থাকা প্রয়োজন। যেমন, ৩০ কোটি টাকার কম মূলধন সম্পন্ন কোনো কোম্পানিকে স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে এবং ৫০ কোটি টাকার কম মূলধন সম্পন্ন কোনো কোম্পানিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি করার অনুমতি দেয়া হবে না। এই সুপারিশের উদ্দেশ্য হলো, শেয়ারবাজারে মানসম্পন্ন কোম্পানির উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং বাজারের গভীরতা বাড়ানো।

টাস্কফোর্সের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে যে, আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ রাখা হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৫ শতাংশ শেয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এবং বাকি ৪৫ শতাংশ শেয়ার দেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। এই পদক্ষেপটি বাংলাদেশি বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করবে।

আইপিও প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের পরামর্শ অনুযায়ী, আইপিও আবেদনের পর থেকে তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে এই প্রক্রিয়া সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে, আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া ছয় মাস থেকে সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। এর মাধ্যমে কোম্পানির তালিকাভুক্তি দ্রুত হতে সাহায্য করবে, যা শেয়ারবাজারে আস্থা সৃষ্টি করবে।

আইপিও আবেদনের তথ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য টাস্কফোর্স আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। তাদের মতে, কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদন করার সময় যে তথ্য প্রদান করবে, তা সঠিক এবং বাস্তব কিনা তা যাচাই করতে বিএসইসি নির্ধারিত আইপিও অডিটর প্যানেলের মাধ্যমে আর্থিক হিসাব নিরীক্ষণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। এই ব্যবস্থা আইপিও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে।

এ সময় টাস্কফোর্সের সদস্যরা, বিএসইসির তিন কমিশনার এবং টাস্কফোর্সের ফোকাস গ্রুপের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে টাস্কফোর্সের সদস্য ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের সিইও মাজেদুর রহমান এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর মধ্যে সদস্য হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।

এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের মান এবং সুশাসনের উন্নতি ঘটবে, যা পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপন করবে।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.