জেমিনি সি ফুডের শেয়ার কারসাজি
বিকন ফার্মার এমডিসহ পাঁচ জনকে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৫ ব্যক্তিকে মোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এই শেয়ার কারসাজির নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিম এবং তার পরিবারের সদস্যরা। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে তিনি ও তার সহযোগীরা যোগসাজশ করে জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছেন। বাজারে গুঞ্জন ছিল, কোম্পানিটির ব্যবসায়িক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। তদন্ত শেষে বিএসইসি নিশ্চিত হয় যে, অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে বাজারকে প্রভাবিত করেছেন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলেছেন।
শেয়ার কারসাজিতে মোহাম্মদ এবাদুল করিমের দুই সন্তান, তার শ্যালক ও এক নিকট আত্মীয় জড়িত। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম ৩৪১.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৩৪.৪০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে যান। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫৯২.৭০ টাকা বা ১৭৩.৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তে উঠে আসে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করেছেন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন।
শেয়ার কারসাজির অভিযোগে বিএসইসি মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে ১১ লাখ টাকা, তার মেয়ে রিসানা করিমকে ২.১২ লাখ টাকা, ছেলে উফাত করিমকে ১.৪১ লাখ টাকা, শ্যালক সোহেল আলমকে ১০ লাখ টাকা ও আত্মীয় ফাতেমা সোহেলকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। সর্বমোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তাদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৭(ই)(২), ১৭(ই)(৩) এবং ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘন করেছে। যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এর আগেও মোহাম্মদ এবাদুল করিম পুঁজিবাজারে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে বড় অঙ্কের জরিমানার মুখে পড়েন। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান হিসেবে তার স্ত্রী নুরুন নাহার, তার মেয়ে এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোও শেয়ার কারসাজির দায়ে শাস্তির আওতায় এসেছে।
বিএসইসির নতুন কমিশন, যার নেতৃত্বে আছেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও বর্তমান কমিশন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে সহায়ক হবে।