আজ: রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ইং, ৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার |

kidarkar

শেয়ারবাজারে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণ এশিয়ায় পুঁজিবাজারের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ১৮ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৫ লাখের নিচে, যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৭২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এমনকি ভিয়েতনামের সঙ্গেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের পশ্চাদপদতা তুলে ধরে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)–এর তথ্য অনুযায়ী, সিডিবিএল প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ৭৯ লাখ ৫১ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সক্রিয়ভাবে লেনদেন হয় এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা মাত্র ১৭ লাখের মতো। পৃথক ও যৌথ অ্যাকাউন্ট বাদ দিলে, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা আরও কম। শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৫ লাখও হবে না।

এর বিপরীতে ভারতের প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১ কোটির বেশি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারী রয়েছে—জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার ২ কোটির কিছু বেশি মানুষের মধ্যে ৭ লাখের বেশি মানুষ শেয়ার বাজারে যুক্ত, যা ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। থাইল্যান্ডে এই হার প্রায় ২৩ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৫৩ শতাংশ। এমনকি মাত্র ৫৬ লাখ মানুষের দেশ সিঙ্গাপুরে প্রতি দুইজনের একজন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বারবার বাজার ধস, কারসাজি, বিচারহীনতা, স্বচ্ছতার অভাব, এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে মানুষের আগ্রহ কমেছে। বিনিয়োগে সুরক্ষা নেই—এই ভাবনা থেকেই তারা সরকারি সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে আমানতের মতো নিরাপদ বিকল্পে ঝুঁকছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা মানেই কারসাজি, দরপতন আর আস্থার অভাবের কথা ওঠে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য এটি বড় সংকেত।”

শুধু ব্যক্তি নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও আশানুরূপ নয়। তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় না, আর্থিক প্রতিবেদনেও স্বচ্ছতা নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতা দুর্বল হওয়ায় সাধারণ মানুষ এই বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন।

বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে পুঁজিবাজারকে মূলধন সংগ্রহের প্রধান উৎসে পরিণত করেছে, বাংলাদেশ সেখানে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সময় বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কার্যকর নজরদারি ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির—না হলে দক্ষিণ এশিয়ায় এই পিছিয়ে পড়া আরও দীর্ঘ হবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.